,

অভিযোগ প্রমানিত হলেও হাস্যকর শাস্তি নিয়ে নবীগঞ্জের সর্বত্র তোলপাড়

শিক্ষিকা ও নবজাতকের মৃত্যু ॥ পুনরায় তদন্তের দাবি

শাহ সুলতান আহমেদ ॥ নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স ও আয়ার ভুল চিকিৎসায় স্কুল শিক্ষিকা প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় গত ১০ মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে গঠিত তদন্ত কমিঠি। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্ত আয়া নমিতা আচার্য্যকে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে আর সেই সাথে অভিযুক্ত দুই নার্স আরতী দেবনাথ ও চন্দনা দে কে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের এরকম হাস্যকর শাস্তির ঘটনায় নবীগঞ্জে তোলপাড় চলছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার ও নবীগঞ্জের সচেতন মহল তা মেনে না নিয়ে ঘটনাটি পুনরায় তদন্ত পূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছেন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দেয়া হয়েছে বলে জানাগেছে। উল্লেখ্য, নবীগঞ্জ পৌর এলাকার শিবপাশা গ্রামের বাসিন্ধা এবং উপজেলার রোকনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিকিক্ষা সুফলা রাণী দাশ (৩৩) কে গভবর্তী অবস্থায় গত ২৮ মার্চ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আয়া নমিতা রানী আচার্য্যর পরামর্শ মতে ভর্তি করা হয়। সব ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে হাসপাতালেই ভালভাবে সন্তান প্রসব হবে এতে কোন ডাক্তারের প্রয়োজন হবে না বলে আয়া নমিতা আচার্য্য, সিনিয়র স্টাফ নার্স আরতি বালা ও চন্দনা দে তাদেরকে নিশ্চয়তা দেন। বিষেশজ্ঞ কোন চিকিৎসক ছাড়াই তারা তিন জনের সমন্বয়ে শুরু করেন ওই প্রসূতির ডেলিভারীর কাজ। এক পর্যায়ে প্রসূতির অতিরিক্ত রক্ত রণ হয়। তার অবস্থার বেগতিক দেখে দীর্ঘ প্রায় ৩ ঘন্টা অতিবাহিত হওয়ার পর দায়ভার এড়াতে কৌশলে তারা সন্ধ্যা ৭টার দিকে রোগীকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পথিমধ্যে আউশকান্দি সংলগ্ন স্থানে পৌছলে প্রসূতি সুফলা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এ ঘটনায় গত ৩ এপ্রিল মৃত্যুবরণকারী শিক্ষিকার ভাই সুজন দাশ বাদী হয়ে সুবিচার চেয়ে হবিগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জনের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়েরের ফলে গত ২৩ এপ্রিল হবিগঞ্জের ডেপুটি সিভিল সার্জন সত্যজিত রায় বিষয়টি তদন্ত করেন। ঘটনাটি নিয়ে গতকাল শুক্রবার দিনভর নবীগঞ্জ শহরে চলে ব্যাপক আলোচনা। বিষয়টি নিয়ে নবজাতকসহ মৃত্যুবরণকারী শিক্ষিকার স্বামী রিপন তালুকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নমিতারা যে অপরাধ করেছে তা তদন্ত প্রতিদেনে বলা হয়েছে। তারা যদি অপরাধী হয়ে থাকে তাহলে শুধু একজনকে বদলী ও দুইজনকে সর্তক করে দেয়ার শাস্তি হাস্যকর ছাড়া কি হতে পারে। তিনি আরো বলেন, এমনিতেই আমি আমার অবুঝ শিশু বাচ্চাকে নিয়ে খুব সমস্যায় আছি তার পরও আমি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিচার চাইবো। নবীগঞ্জ প্রাইমারী শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুবেল মিয়া বলেন, নবজাতকসহ আমাদের শিক্ষিকা সুফলা রাণী দাশ যাদের কারণে মারা গেলেন তদন্তে যদি তারা দুষী হয়ে থাকেন তাহলে এরকম শাস্তি শুধু হাস্যকরই নয় প্রহসনও বটে। তিনি পুনরায় তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি দাবি করেন। ২০১৭ইং সালের নবীগঞ্জ উপজেলার শ্রেষ্ট প্রাইমারী শিক্ষক মধূসদন ভট্টাচার্য্য বলেন, সুফলার মৃত্যুর জন্য নমিতাই দায়ী। নমিতাসহ দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান তিনি। সুফলার স্বামীর বাড়ি এলাকার ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গৌতম কুমার দাশ বলেন, বিষয়টি একবারে পরিস্কার যে আয়া নমিতা ও অদক্ষ নার্সদের কারণে সুফলা নবজাতকসহ মারা গেছে। তাদের বিচার হওয়া উচিত। অভিযোগকারীদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হলে নিহত সুফলার ভাই সুজন দাশ বলেন, আমরা পূণরায় তদন্ত চেয়ে আরো উপরে অভিযোগ দেব। ন্যায় বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাব। উল্লেখ্য, নবজাতকসহ শিক্ষিকার মৃত্যুর বিচারের দাবীতে বাংলাদেশ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নবীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষক সমিতির ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। উপজেলা পরিষদের সামনে উক্ত কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় নিহত সুফলার স্বামী রিপন তালুকদার তার স্ত্রীর স্মৃতিচারণ ও মর্মান্তিক এ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে দোষীদের শাস্তির দাবী জানান। মানববন্ধনে বক্তাগন তাদের বক্তব্যে বলেন, নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়ীত্বরত চিকিৎসক ও কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও খামখেয়ালিপনার ফলে দীর্ঘদিন ধরে ওই হাসপাতালে নানা মর্মান্তিক ঘটনা ঘটছে। শিক্ষকগণ কোন মূহুর্তেই তাদের সহকর্মী শিক্ষিকা সুফলা ও নবজাতকের অকাল মৃত্যু মেনে পারেননি। তার মৃত্যুর ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবী জানান। পরে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। আরো উল্লেখ্য যে, গত ২৮ মার্চ বুধবার বিকেলে প্রসূতি নবীগঞ্জ পৌর এলাকার শিবপাশায় বসবাসরত ওই উপজেলার রোকনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সুফলা রাণী দাশ প্রসবের ব্যথা নিয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। সেখানে সংশ্লিষ্টদের অবহেলা, খামখেয়ালিপানা ও অব্যবস্থপনায় অধিক রক্তক্ষরনের ফলে সুফলা ও তার নবজাতকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনাটি বিভিন্ন সংবাদ পত্রে প্রকাশ হলে অবশেষে নিহত সুফলার ভাই সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দেন।


     এই বিভাগের আরো খবর